Kobigaan (কবিগান)

কবিগান কর্মসূচি – বীরভানপুর বয়েজ ক্লাবের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সংরক্ষণ

বীরভানপুর বয়েজ ক্লাব সমাজের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের পাশাপাশি স্থানীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এরই অংশ হিসেবে, ক্লাবের অন্যতম জনপ্রিয় এবং ঐতিহ্যবাহী উদ্যোগ হলো “কবিগান” কর্মসূচি। কবিগান বাংলার একসময়ের অন্যতম প্রধান সাংস্কৃতিক বিনোদনের মাধ্যম ছিল, যা সময়ের সাথে সাথে কিছুটা হারিয়ে যেতে বসেছে। বীরভানপুর বয়েজ ক্লাবের এই কর্মসূচির লক্ষ্য হলো স্থানীয় মানুষের মধ্যে কবিগানের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা, সেই সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে এর সঙ্গে পরিচিত করা।

কবিগানের ঐতিহ্য ও গুরুত্ব:

কবিগান বাংলার লোকসংগীতের একটি বিশেষ ধারা, যা সাধারণত দুই দলের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলকভাবে পরিবেশিত হয়। একজন কবিয়াল বা গায়ক প্রধান কবি হিসেবে দলে নেতৃত্ব দেন এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গান ও তর্ক করেন। এই গানের মাধ্যমে সামাজিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও নৈতিক বিষয়গুলিকে সহজ ভাষায় উপস্থাপন করা হয়। কবিগানের এই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বাংলার গ্রামীণ এলাকায় একসময় মানুষের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিল, যা ধীরে ধীরে আধুনিক বিনোদনের চাপে চাপা পড়তে থাকে। বীরভানপুর বয়েজ ক্লাবের এই উদ্যোগ সেই হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে নতুনভাবে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা।

কর্মসূচির আয়োজন ও পরিকল্পনা:

প্রতি বছর বীরভানপুর বয়েজ ক্লাব স্থানীয় কবিগান শিল্পীদের নিয়ে একটি বিশাল কবিগানের আসর আয়োজন করে। গ্রামের খোলা মাঠে বা মঞ্চে এই আয়োজন করা হয়, যেখানে শত শত দর্শক এসে অংশগ্রহণ করেন। বিভিন্ন দল থেকে প্রতিযোগী কবিয়ালরা আসেন এবং তারা তাদের কবিগানের মাধ্যমে দর্শকদের মুগ্ধ করেন। প্রতিটি দলের প্রধান কবিয়াল তার সঙ্গীদের নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে গান বাঁধেন এবং প্রতিযোগী দলের সাথে তর্কের মাধ্যমে কবিগানের আসর জমিয়ে তোলেন।

কবিগানের প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার:

কবিগানের এই আসরে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়, যেখানে বিভিন্ন দলের মধ্যে সেরা কবিয়াল ও দলকে পুরস্কৃত করা হয়। বিচারকদের দল উপস্থিত থেকে প্রতিটি দলের গানের মান, পরিবেশনা এবং তর্কের যুক্তির উপর ভিত্তি করে তাদের বিচার করেন। প্রতিযোগিতার শেষে সেরা দলকে বিশেষ সম্মাননা ও পুরস্কার প্রদান করা হয়, যা শিল্পীদের অনুপ্রাণিত করে এবং তাদের কবিগান চর্চায় আরও উৎসাহিত করে।

নতুন প্রজন্মের সাথে পরিচয়:

বীরভানপুর বয়েজ ক্লাবের এই কর্মসূচি নতুন প্রজন্মের কাছে কবিগানকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিশেষভাবে কাজ করে। আধুনিকতার চাপে অনেকেই লোকসংগীত ও কবিগানের সঙ্গে পরিচিত নয়। এই আয়োজনের মাধ্যমে ক্লাবের সদস্যরা তরুণদের মধ্যে কবিগানের প্রতি ভালোবাসা জাগিয়ে তুলতে চান। স্কুল ও কলেজের ছাত্রছাত্রীরা এই আয়োজনে অংশগ্রহণ করে কবিগানের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পায় এবং তাদের মধ্যে অনেকেই ভবিষ্যতে কবিগানের চর্চা করতে আগ্রহী হয়।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব:

বীরভানপুর বয়েজ ক্লাবের “কবিগান” কর্মসূচি স্থানীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সংরক্ষণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এলাকার মানুষের মধ্যে কবিগানের জনপ্রিয়তা বাড়ছে, এবং কবিগানের মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করার একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছে। এছাড়াও, এই আয়োজন সামাজিক মেলবন্ধনের একটি অন্যতম উপায় হয়ে উঠেছে, যেখানে মানুষ একত্রিত হয়ে তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে উদযাপন করে।

উদ্বুদ্ধকরণের আহ্বান:

বীরভানপুর বয়েজ ক্লাব সকলকে এই মহৎ সাংস্কৃতিক উদ্যোগে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে। কবিগান আমাদের ঐতিহ্যের এক অমূল্য সম্পদ, যা সংরক্ষণ ও প্রচারের দায়িত্ব আমাদের সবার। আসুন, আমরা সকলে মিলে কবিগানের ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখি এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এটি পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করি।

 

Our Gallery :

 

Some of Our Video Footages:

 

Post navigation