Kolosh Yatra (কলস যাত্রা)

কলস যাত্রা – মহা শিবরাত্রি উপলক্ষে বীরভানপুর বয়েজ ক্লাবের বার্ষিক আয়োজন

প্রতিবছর মার্চ মাসে মহা শিবরাত্রি উপলক্ষে বীরভানপুর বয়েজ ক্লাব আয়োজন করে “কলস যাত্রা”। এই ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক আয়োজনটি স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, কারণ এটি শিবভক্তদের একত্রিত করে শিবের আশীর্বাদ লাভের উদ্দেশ্যে। কলস যাত্রার মাধ্যমে ভক্তরা দেবতা শিবের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা ও ভক্তি নিবেদন করেন এবং ধর্মীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে উদযাপন করেন।

মহা শিবরাত্রির তাৎপর্য ও কলস যাত্রার ভূমিকা:

মহা শিবরাত্রি হলো হিন্দু ধর্মের একটি বিশেষ পবিত্র উৎসব, যা প্রতি বছর ফাল্গুন মাসে অনুষ্ঠিত হয়। এই দিনে শিবভক্তরা উপবাস করেন, শিবলিঙ্গে জল ও দুধ অর্পণ করেন এবং শিবের পূজা করেন। কলস যাত্রা এই পবিত্র দিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ আচার, যেখানে শিবভক্তরা একটি মিছিল আকারে শিব মন্দিরে যান এবং শিবলিঙ্গে পবিত্র জল ও অন্যান্য উপাচার নিবেদন করেন। কলস, যা সাধারণত একটি মাটির বা ধাতুর পাত্র, শিবের প্রতি ভক্তির প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এতে পবিত্র জল ভর্তি করা হয় এবং তা মন্দিরে নিয়ে গিয়ে শিবলিঙ্গে ঢালা হয়।

বীরভানপুর বয়েজ ক্লাবের কলস যাত্রার আয়োজন:

বীরভানপুর বয়েজ ক্লাব প্রতিবছর মহা শিবরাত্রির আগে স্থানীয় মানুষদের নিয়ে একটি বিশাল কলস যাত্রার আয়োজন করে। যাত্রাটি গ্রামের কেন্দ্রীয় শিব মন্দির থেকে শুরু হয়ে গ্রামের প্রধান সড়ক ধরে সকাল সকাল এগিয়ে যায় এবং স্থানীয় পবিত্র নদী যা “দুর্গাপুর দামোদর নদী বা দুর্গাপুর ব্যারাজ” নামে পরিচিত, সেখান থেকে সবাই জল নিয়ে আসে – ঠিক বাঙালির বিয়ের আগের দিন যা হয় সেইরকম, এবং শেষে মন্দিরে ফিরে আসে। শিবভক্তরা মাথায় বা হাতে কলস বহন করে এই যাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। কলসের মধ্যে পবিত্র দামোদর নদী থেকে সংগ্রহ করা জল ভরা থাকে, যা পরবর্তীতে শিবলিঙ্গে নিবেদন করা হয়।

ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও সুশৃঙ্খল আয়োজন:

কলস যাত্রার সময় শিব ভক্তরা বিভিন্ন ভজন ও ধুন গেয়ে যাত্রা করেন, যা ধর্মীয় পরিবেশকে আরও গভীর করে তোলে। এই যাত্রার সময় ভক্তরা বিভিন্ন রঙের পোশাক পরেন এবং শিবের নাম জপতে জপতে মন্দিরের দিকে অগ্রসর হন। বীরভানপুর বয়েজ ক্লাবের স্বেচ্ছাসেবকরা যাত্রাটিকে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করেন, যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না ঘটে। মন্দিরে পৌঁছে সমস্ত ভক্তরা শিবলিঙ্গে পবিত্র জল ঢালেন এবং মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে শিবের আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন।

সমাজের অংশগ্রহণ ও ধর্মীয় সংযোগ:

বীরভানপুর বয়েজ ক্লাবের কলস যাত্রা কেবলমাত্র একটি ধর্মীয় আচার নয়, এটি এলাকার মানুষের মধ্যে ঐক্য ও ভক্তির সংযোগ গড়ে তোলে। প্রতিবারের যাত্রায় শিশু থেকে বৃদ্ধ, সকলেই সমান উৎসাহে অংশ নেন। বিশেষত মহিলাদের অংশগ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা এই কলস যাত্রায় শিবের প্রতি তাদের ভক্তি প্রকাশের একটি বিশেষ মাধ্যম হিসেবে এটি দেখেন।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব:

কলস যাত্রা শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় আচার নয়, এটি সামাজিক মেলবন্ধনের একটি মাধ্যম হিসেবেও কাজ করে। ভক্তদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সহমর্মিতা ও সহযোগিতার মনোভাব তৈরি হয়। যাত্রার মাধ্যমে স্থানীয় সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার করা হয়, যা নতুন প্রজন্মের কাছে এই ঐতিহ্যকে পৌঁছে দিতে সহায়ক হয়। বীরভানপুর বয়েজ ক্লাবের এই আয়োজন এলাকার মানুষদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ধর্মীয় ঐক্য বাড়িয়ে তোলে।

আহ্বান:

বীরভানপুর বয়েজ ক্লাব সকল শিবভক্ত এবং এলাকার মানুষকে প্রতি বছর মার্চ মাসে আয়োজিত এই পবিত্র কলস যাত্রায় অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানায়। আসুন, সকলে মিলে শিবের আশীর্বাদ লাভ করি এবং আমাদের ধর্মীয় ও সামাজিক ঐতিহ্যকে সজীব রাখি।

 

Our Gallery:

 

Our Videos :

For More Videos SUBSCRIBE & Visit Our Official YouTube Channel “Baba Jaleswar Foundation Trust

Post navigation